ডেস্ক নিউজ:
প্রচারণায় চরম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আগামীকাল রোববার ভোটের দিন প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের শেষ পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। যেকোনো মূল্যে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে বলা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কিংবা অনিয়ম হলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক সহায়তা চাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

দলটির হাইকমান্ড ভোট ডাকাতি ও অনিয়ম ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে কেন্দ্র পাহারার ওপর। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, যদি সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু করার পরিবর্তে যেকোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার পথ বেছে নেয়, তাহলে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। আর এর ফলে পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে।

প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা প্রসঙ্গে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আমরা সবাইকে ভোটের মাঠে শক্তভাবে অবস্থান নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা বলেছি, যতই জুলুম-নির্যাতন হোক না কেন মাঠ ছেড়ে যাওয়া যাবে না। ভোটকেন্দ্রে থাকতে হবে। ভোটারদের অভয় দিতে হবে। তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি, ভোট সন্ত্রাস, ব্যালট বাক্স ছিনতাই যাতে কেউ করতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্র পাহারা অর্থাৎ সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছি।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের ভোটকে সামনে রেখে ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি ও তাদের মিত্ররা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশে ‘যতটুকু সম্ভব’ কৌশলী প্রচারণা শেষে এখন কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচনী কাজ তদারকি করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি বুথে এজেন্ট দেয়া নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। মামলা ও গ্রেফতারের কারণে পছন্দসই এজেন্টদের পাচ্ছেন না তারা। এজেন্টদের যে তালিকা প্রার্থীরা প্রস্তুত করে রেখেছিলেন তা এখন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। গতকাল শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কুমিল্লা-৩ আসনের প্রার্থী কে এম মজিবুল হক বলেছেন, গতকাল তার ৪০ জন এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজেন্টদের গ্রেফতারে আরো অভিযান চলছে। পুলিশের তাণ্ডবে এলাকায় চরম বৈরী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী শরীফুল আলম বলেন, প্রচারণায় হামলা চালানোর পর এখন চলছে গ্রেফতার অভিযান। পুলিশের মূল টার্গেট ধানের শীষের এজেন্ট। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী আমিরুল ইসলাম আলীম বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত। কিন্তু পুলিশ সুষ্ঠু র্নিাচনের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিকূলতা পেরিয়ে কেন্দ্রীয় ও আসনভিত্তিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে বিএনপি জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কোন আসনে কোন প্রার্থীর কী করণীয় সে ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এতদিন প্রতিকূল অবস্থা থাকলেও তা ভোটের আগেই কেটে যাবে বলে প্রার্থীদের সাহস দেয়া হয়েছে। ভোটের দিনে সার্বক্ষণিক কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রার্থী ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্টকে কোনো ধরনের অনিয়ম, অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশন, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মৌখিক অভিযোগের পাশাপাশি লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। সময় ক্ষেপণ রোধে অভিযোগের একটি ফরমেটও ঠিক রাখতে বলা হয়েছে। পোলিং এজেন্টদের নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের ভেতরে যেন এক মুহূর্তের জন্যও কোনো সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। যেকোনো সমস্যা মিডিয়ায় এবং কেন্দ্রে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে একাধিক স্থান থেকে নির্বাচন মনিটরিং করা হবে। বিএনপি চেয়াপারসনের গুলশান কার্যালয়, পুরানাপল্টনে ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নির্বাচন মনিটরিং করবেন। দেশের সব আসনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নির্বাচনের দিন প্রতি ঘণ্টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্থিতি জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতি মুহূর্তের তথ্য জানাতে একটি আলাদা মিডিয়া সেন্টার খোলা হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন আসনে গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীরা নিজ বাসভবনে বসে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক নানা বৈঠক করছেন। টেলিফোনে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এজেন্ট তালিকা ঠিক করা হচ্ছে। ঢাকা-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস সকাল থেকেই শাজাহানপুরে নিজের বাসায় সময় কাটান। ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেয়ার কাজ করেন তিনি। বাসায় আসা কর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া সময়েও বাসা থেকে তিনি খুব একটা বের হতে পারেননি। প্রতিদিনই তার বাসার সামনে থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস বলেছেন, বাসায় নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবুও এজেন্ট নিয়োগের কাজ নানাভাবে শেষ করা হচ্ছে।

ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ শ্যামপুরের নিজ বাসভবনে নেতাকর্মীদের নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের নানা নির্দেশনা দেন। বিকেলে তার বাসভবন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফিরে রাখে। এ সময় তিনি বলেন, প্রচারণা শেষ হয়েছে, এরপরেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাকে এবং তার কর্মীদের বিশেষ করে ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে এবং গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে। এরপরেও শত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জনগণ ভোট দিতে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ঢাকা-১০ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান গতকাল মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন।

ঢাকা-১১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা বেগম অভিযোগ করেছেন, তিনি পুলিশি নজরদারিতে আছেন। যেখানেই যাচ্ছেন পুলিশ তার পিছু নিচ্ছে। গতকালও তার বাসা থেকে তার কাছে আত্মীয়সহ অন্তত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শামীমা। ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক সাজু সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বিকেলে পোলিং এজেন্টদের নিয়ে এক কর্মশালা ও মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।